Homeউদ্দ্যোক্তানওগাঁর রাণীনগরে পরীক্ষামূলক জিরা চাষে সাফল্য

নওগাঁর রাণীনগরে পরীক্ষামূলক জিরা চাষে সাফল্য

এমরান মাহমুদ প্রত্যয়,নওগাঁ :

জিরা মসলাজাতীয় অর্থকরী ফসল।কৃষক মানেই দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী হাতিয়ার।অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে
দেশে চাষ শুরু হয়েছে অর্থকারী ফসল জিরার।দেশে জিরার চাহিদার পুরোটায় আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে। আর এই মূল্যবান জিরা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার শিয়ালা গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম। তার এই পরীক্ষামূলক জিরা চাষ দেখে আগ্রহ বাড়ছে অন্য কৃষকদেরও।

জানা যায়, কৃষক জহুরুল ইসলাম বিভিন্ন সময় নানা ধরনের সবজি চাষ করে থাকেন। বাজারে দাম বেশি হওয়ায় তিনি জিরা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর অনলাইনে এর চাষাবাদ পদ্ধতি দেখতে শুরু করেন। অনেক চেষ্টা করে অনলাইনে ভারত থেকে প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ করে ৫০০ গ্রাম জিরা বীজ সংগ্রহ করেন।

এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৯ শতক জমিতে এই বীজ রোপণ করেন। বর্তমানে জহুরুলের জিরা গাছে ফুল ও জিরা আসতে শুরু করেছে। তিনি পরীক্ষামূলক জিরা চাষে অনেকটা সফল হওযায় স্থানীয় কৃষদের মধ্যেও জিরা চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে বীজ সংগ্রহের পর পানিতে ৩০টি জিরা বীজ ভিজে টিস্যুর মধ্যে রেখে পরীক্ষা করি, কি পরিমাণ গাছ গজাবে। পরে ৩০টির মধ্যে ২৫টি গাছ ওঠে। তখন ৯ শতক জমিতে হালচাষ ও সার ছিটিয়ে বীজ রোপণ করি। বীজ রোপণের ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে জিরা গাছ উঠতে শুরু করে। পরে বৃষ্টির কারণে কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যায়। বাকি গাছগুলো ভালো করে যত্ন নেওয়া শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, যেভাবে সরিষার চাষ করা হয়, একই রকমভাবে জিরা চাষ করেছি। এরইমধ্যে গাছে ফুল ও জিরা ধরতে শুরু করেছে। গাছে যতগুলো ফুল; ততগুলোই জিরা ধরছে। হিসেব করে দেখছি যেভাবে জিরা ধরছে তাতে ৯ শতক জমি থেকে ২০ থেকে ২২ কেজি জিরা পাওয়া যাবে। বাজারে জিরার দাম ভালো থাকায় এর মূল্য ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তাতে জিরা চাষ একটি লাভজনক ফসল মনে হয়েছে। তবে জিরা চাষ শীতকালে ভালো হয়। বীজ বপনের ৩ থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগে জিরা ঘরে উঠতে। এবছর পরীক্ষামূলকভাবে জিরা চাষ সফল দাবি করে আগামীতে আরও বড় পরিসরে চাষাবাদের পরিকল্পনা করছেন বলে জানান তিনি।

স্থানীয় তানজিব হোসাইন নামে এ যুবক বলেন, জহুরুল ভাই নতুন ফসল জিরা চাষ করেছেন। জিরা চাষ ইতোপূর্বে আমরা দেখিনি। প্রথম হলেও খুব সুন্দর তার জিরার গাছ হয়েছে। বাজারে জিরার দাম ভালো। চিন্তা করছি, তার দেখাদেখি আমরাও জিরা চাষ করবো এবং জিরা চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

স্থানীয় আরেক কৃষক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমাদের এই এলাকায় জিরা চাষ প্রথম হিসেবে মোটামোটি গাছ ভালোই হয়েছে জহুরুলের। শুনলাম তার এই জমিতে ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে আর পাবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মতো। কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করলে আমরাও জিরা চাষ করবো।

এ বিষয়ে রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক বলেন, জহুরুল ইসলাম উদ্যোগী কৃষক। তিনি নতুন ফসল হিসেবে জিরা পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছেন। তার জিরা চাষ কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক নজরে রেখেছে। আমরা শেষ পর্যন্ত এটার ফলন কেমন হয় সেটা দেখবো। তিনি জিরা চাষে সফল হলে উঠান বৈঠক, সভা, সেমিনার করে অন্য কৃষকদের জিরা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে যে পরিমাণ জিরার চাহিদা তার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। জিরা মসলা এখনও বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর। তাই এই জিরা চাষে সফল হলে কৃষিতে বাণিজ্যকরণ ও জিরা উৎপাদন করে আমদানির পরিমাণ কমানো সম্ভব বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments